হারাম সহবাস: লজ্জা নয় জানা জরুরী ! | Haram Sex in Islam

হারাম সহবাস: লজ্জা নয় জানা জরুরী!

আমরা জানি, নিজ স্ত্রী ও অধিনস্ত দাসি ব্যতিত অন্যকারো সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া হারাম।

কিন্ত বর্তমান সময় দাসীর প্রচলন নেই অতএব এটা বর্তমানে গ্রহণযোগ্য নয় ।অথচ আমরা অনেকেই জানিনা যে, এমন কিছু সময় ও প্রন্থা রয়েছে যে সময় ও প্রন্থায় নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়াও হারাম।


ইসলামে যে সময় ও পন্থায়  নিজ স্ত্রীর সাথেও সহবাস করা হারাম তা নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ

❑ [এক] হায়েজ ও নেফাস অবস্থায়:

অনেক দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিরা স্ত্রীর হায়েজ অবস্থাতেও সহবাসে লিপ্ত হয়। অথচ হায়েজ অবস্থায় সহবাসে লিপ্ত হওয়া সম্পুর্ণরুপে হারাম।

আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ ۖ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ ۖ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ ۖ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ [٢:٢٢٢]

"আর তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দিন,এটা অশুচি(কষ্ট)। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী-গমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না,যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে,তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।"

 [সূরা বাকারা, আয়াত: ২২২]

এমনকি হায়েজ অবস্থায় কোন মেয়েকে বিবাহ দেওয়াও উচিৎ নয়(বিবাহ পড়ানোতে কোন সমস্যা নেই, সমস্যা হলো হায়েজ অবস্থায় বাসর করতে দেওয়াতে। কেননা হায়েজ অবস্থায় সহবাস হারাম, যা উপরেই বলা হয়েছে)।

🔳এমনিভাবে কোন মহিলার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর যে কয়েকদিন ব্লাড( রক্ত) আসে এই দিনগুলোকে নেফাস বলে এর সর্বোচ্চ মেয়াদ চল্লিশ দিন।কমের কোন নির্ধারিত মেয়াদ নেই।এই নেফাস চলাকালীন সময়গুলোতেও স্ত্রী সহবাস করা হারাম। অথচ অনেকেই না জানার কারণে এই সময়ে সহবাসে লিপ্ত হয় যা হারাম।

🔳অবশ্য,হায়েয ও নেফাস অবস্থায় সহবাসে লিপ্ত না হয়ে স্ত্রীর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ বাদ দিয়ে বাকী অঙ্গ দিয়ে উপভোগ করা জায়েয আছে।কিন্তু নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত অংশে উপভোগ গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। 

❑ [দুই] রোযা অবস্থায়:

রমযানের রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস হারাম। কেননা রোযা হচ্ছে, "আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে ফজর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও যৌনসঙ্গম হতে বিরত থাকার নাম। কেউ যদি রোযা অবস্থায় সহবাস করে তাহলে সে অনেক বড় পাপে লিপ্ত হবে, তার রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং তাকে অনেক বড় কাফফারা দিতে হবে।"

[ফাতহুল বারী, ৪/১৩২]

তবে, রমযানে রাতের বেলা অর্থাৎ- ইফতার থেকে নিয়ে সাহরি পর্যন্ত সহবাস করা সম্পুর্ণরুপে জায়েজ।

আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, اُحِلَّ لَکُمۡ لَیۡلَۃَ الصِّیَامِ الرَّفَثُ اِلٰی نِسَآئِکُمۡ ؕ"আর সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে।" [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭]


আর নফল রোযা অবস্থায় সহবাস করে ফেললে কোন কাফফারা নেই। তবে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কাজেই,স্বামীর উচিত, ধৈর্যধারন করা, রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করা। 

❑ [তিন] স্ত্রীর পায়ুপথে/ পিছনের রাস্তায়(মলদ্বারে) সহবাস:

অনেক  বিকৃত মানসিকতার মানুষ হালাল প্রন্থা ছেড়ে স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাসে লিপ্ত হয়। ইদানিং পশ্চিমা ইতরশ্রেনীর মানুষদের কালচার মুসলিম সমাজেও ছয়লাভ হচ্ছে। অথচ এটি একটি অতিব নোংরা, নিকৃষ্ট কাজ। এই কাজটি তো হারামই, এমনকি কাজটি নবীজির ভাষায় 'কুফুরীর নামান্তর'।


রাসূল (ﷺ) বলেছেন, 

 مَنْ أَتَى حَائِضًا، أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ.

"যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতীর সাথে মিলিত হয় কিংবা কোন মহিলার পায়ুপথে সঙ্গম করে অথবা কোন গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে’।"

[তিরমিযী, হাদীস নং-১৩৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯২৯০]

অপর হাদিসে রাসূল (ﷺ) বলেছেন, 

 لَا يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَى رَجُلٍ أَتَى امْرَأَةً فِي الدُّبُرِ 

"যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করে আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না।" [তিরমিযি, হাদিস নং-১১৬৫]


আরেক হাদিসে রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَ

"যে ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে নিতম্বে সহবাস করে সে লা’নত প্রাপ্ত।" [আবু দাউদ, হাদিস-২১৬২]

আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে পবিত্র তথা হালাল প্রন্থা অবলম্বন করার তাওফ্বীক দান করুন, দ্বীন ইসলাম বুঝে-শুনে সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করার তাওফ্বীক দান করুন। 

আমীন।