এবার কী থাকছে ইসি গঠনের আইনে? Bangladesh Election Commission 2022 | Ekushe News

 


আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদ অধিবেশনে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন করবেন বলে দিনের কার্যসূচিতে রয়েছে।



রীতি অনুযায়ী পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হবে।


এ আইন করার উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বিলে বলেছেন, “প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে মর্মে আশা করা যায়।”


বিলে বলা হয়েছে, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতঃপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।”



কী হবে সার্চ কমিটির কাজঃ 

খসড়া আইনে সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে।

আইনে বেধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

রোববার সংসদে উঠছে ইসি নিয়োগের আইন

সার্চ কমিটি রেখেই হচ্ছে ইসি গঠনের আইন

নতুন আইন করেই গঠন হচ্ছে নতুন ইসি  


এ অনুসন্ধান কমিটি সিইসি ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুই জন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটির গঠনের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে দেবে বলে খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে।


বিলে বলা আছে সার্চ কমিটি সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।



কারা থাকবেন সার্চ কমিটিতে

বিলে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক।


সদস্য হিসেবে থাকবেন- প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুই জন বিশিষ্ট নাগরিক।


তিন জন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে বলে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।আর কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।


সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা

সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে বলে বিলে বলা হয়েছে।


>> তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

>> নূন্যতম ৫০ বছর বয়স হতে হবে।

>> কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।


সিইসি ও কমিশনারদের অযোগ্যতা

প্রস্তাবিত আইনে সিইসি ও কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে।


>> আদালত অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করলে।

>> দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে।

>> কোনো বিদেশি রাষ্ট্র্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে।

>> নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে।

>> ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে।

>> আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।


আইনের প্রেক্ষাপট নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন এবং সার্চ কমিটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিলটি আনা হচ্ছে।


কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিদায় লগ্নে আকস্মিকভাবে নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এখন সংসদে পাসের উদ্যোগ এল সরকারের পক্ষ থেকে।


১৭ জানুয়ারি বঙ্গভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ।১৭ জানুয়ারি বঙ্গভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ।যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গেল ডিসেম্বরে ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরুর আগে বলেছিলেন, ‘সময়ের স্বল্পতার কারণে’ এবার আইন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সংলাপে অংশ নেওয়া সব দলই আইন করার পক্ষে জোরালোভাবে দাবি জানালে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

গত সোমবার প্রস্তাবিত আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। তারপর এবারের অধিবেশনেই তা উত্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।


কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে রাষ্ট্রপতিকে।


এক্ষেত্রে আইনটি সংসদে তোলা থেকে পাস করে গেজেট প্রকাশের জন্য হাতে সময় রয়েছে চার সপ্তাহ।


ইসি আইন নিয়ে বিএনপি বললো, ‘যে লাউ, সেই কদু’

তাড়াহুড়োর আইন ভালো হবে না, সাবেক সিইসি হুদা ইসি নিয়ে সংলাপ: আইন করার পক্ষেই পাল্লা ভারী  বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে, সাংবিধানিক সংস্থা ইসিতে কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। আর তা একটি আইনের অধীনে হবে।

এতদিন সেই আইন না হওয়ায় প্রতিবারই ইসি গঠনের সময় শুরু হয় বিতর্ক।


তা এড়াতে ২০১২ সালে নতুন কমিশন নিয়োগের সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটি নামে একটি মধ্যস্থ ফোরাম তৈরি করেন, যেটি নিয়েও পড়ে বিতর্ক হয়।

এ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিকদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করেন।

ওই সার্চ কমিটি সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হতে যোগ্যদের নামের একটি তালিকা তৈরি করেন। সেই তালিকা থেকে একজন সিইসিসহ অনধিক পাঁচজন কমিশনার নিয়োগ দেন।

এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করেছিলেন। এবারও একই পদ্ধতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।


কিন্তু সংলাপে অংশ নেওয়া ২৫টি দলের প্রায় সবগুলো ইসি গঠনে স্থায়ী সমাধান হিসেবে আইন প্রণয়নের উপর জোর দেয়। আলোচনায় রাষ্ট্রপতিও এবিষয়ে সম্মত হন বলে দলগুলোর নেতারা জানান। বিএনপিসহ সাতটি দল অবশ্য সংলাপে অংশ নেয়নি।


সূত্র