ওসি প্রদীপ এর বেতন ও আয়ের উৎস ছিলো কি ? OC Prodip News Update | Salary & Income Source

 


অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের জেরে অপরাপর ওসি প্রদীপের সব অপরাধই চলে আসে প্রকাশ্যে। বেরিয়ে আসে তার বিপুল বিত্তবৈভবের খবরও।


সিনহা হত্যার ঘটনায় তখন টেকনাফে কিলিং মেশিন খ্যাত ওসি প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি করণের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন দায়ের করা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।

ওসি প্রদীপের অবৈধ সম্পদের সম্পর্ক তখন চমক জাগানিয়া তথ্য দেয় দুদক। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির করা অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি করণের নামে চার কোটি ৪৪ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য দেয় সংস্থাটি। তবে এসব সম্পদ অর্জনের পক্ষে তার কোনো বৈধ আয়ের উৎস নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে মাত্র দুই হাজার ২৫০ টাকা বেসিক বেতনে পুলিশের উপপরিদর্শক পদে চাকরিতে যোগদান করেন প্রদীপ কুমার দাশ, যা সাকল্যে তার মাসিক বেতন ৪ হাজার ৪৮০ টাকা।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্রটি ঢাকাটাইমসে জানায়, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত সরকারি পে স্কেল বৃদ্ধি করলেও সেটা একজন উপ-পুলিশ পরিদর্শকের বেতন সাকুল্যে ১০ হাজার ৩৬০ টাকার বেশি হয়নি। আর ২০০৯ সালের পে স্কেলে একজন পরিদর্শকের (ইন্সপেক্টর) বেতন স্কেল ছিল ১১ হাজার থেকে ২০ হাজার ৫৭০ টাকা পর্যন্ত।


পুলিশের একজন পরিদর্শক নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ২০০৫ সালের বেতন স্কেলে পুলিশের যেকোনো স্তরের কর্মকর্তাদের বেতন দিয়ে জীবন চালানো প্রায় দুরূহ ছিল। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরের বেতন ২২ হাজার থেকে ৫৩ হাজার ৬০০ টাকা। ওসি প্রদীপও একই স্কেলে বেতেন পেতেন।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রটি জানায়, ২০১৫ সালে কার্যকর হওয়া বেতন স্কেলে ওই ছয় বছরে ৬০ হাজার টাকা করে হিসাব করলেও তিনি এই সময়ে পুরো বেতনও যদি না খেয়ে রেখে দেন সেই অঙ্কটি দাঁড়াবে ৪৩ লাখ টাকা। তবে তা কোনোভাবেই সম্ভব না। এ ছাড়া তিনি সারা জীবন সরকারি যে বেতন পেয়েছেন সেটা খরচ না করে জমালেও সেটা এক কোটি টাকার বেশি হবে না।


দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, দুদক ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর নামে যে সম্পদের খোঁজ পেয়েছে তার চেয়ে অন্তত আরও কয়েক গুণ বেশি সম্পদের মালিক ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী, যা দুদক অল্প সময়ের মধ্যে হিসেবে আনতে পারেনি।



দুদকের অনুসন্ধানে আরও একটি বিস্ময়কর তথ্য জানিয়েছে সংস্খাটির অনুসদ্ধান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তিনি জানান, দুদকে ওসি প্রদীপের যে সম্পদের তথ্য পেয়েছে তার সবই তার স্ত্রী চুমকি করণের নামে। নিজের নামে তার কোনো সম্পদ নেই। এছাড়া ওসি প্রদীপ ছয়তলা একটি বাড়ি শ্বশুরের নামে কেনার পর তা তার স্ত্রীর নামে শ্বশুরকে দিয়ে দানপত্র হিসেবে কবলা করে নেন। আদতে এই বাড়িটি প্রদীপের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফের কাছে বাহারছড়া চেকপোস্টে রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনার পর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ৫ আগস্ট কক্সবাজারের হাকিম আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এই হত্যার ঘটনায় বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলিকে ১ নম্বর এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর আসামি করা হয়। মামলা হওয়ার পর ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য ৬ আগস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রদীপ এবং কক্সবাজারের এসপি এবিএম মাসুদ হোসেনসহ আটজনের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশে।

প্রদীপকে গ্রেপ্তারের পরই আত্মগোপনে চলে যার তার স্ত্রী চুমকি করণ। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলার পরপরই আড়ালে চলে যান তিনি। খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও তিনি কোথায় আছেন এমন তথ্য নেই।

ওসি প্রদীপকে টেকনাফের সাধারণ মানুষ ‘কিলিং মেশিন’ বলত। তিনি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ককে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছিলেন বলে টেকনাফের সাধারণ মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। এই সড়কে চলাচলে ভীতির সঞ্চার হয় স্থানীয়দের মধ্যে। টাকা না পেলেই ক্রসফায়ারে হত্যার বিস্তর অভিযোগও রয়েছে প্রদীপ কুমার দাসের বিরুদ্ধে।

২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে সরকার। এতে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় বন্দুকযুদ্ধে নিহতের পরিসংখ্যান। ২০২০ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু কক্সবাজার জেলায় পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ২৮৭ জন। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৭৪ জন নিহত হন। আর শুধু টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ১৬১ জন।