এআই কি আমাদের খাবার ও পানির ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে?
বর্তমান বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) একটি বড় আলোচনার বিষয়। মানুষকে দ্রুত তথ্য দেয়া, অটোমেশন, ব্যবসা-বাণিজ্য, গবেষণা বা বিনোদন—প্রতিটি ক্ষেত্রেই এআই আমাদের জীবনকে বদলে দিচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এআই কি শুধু মানুষের কাজই নিচ্ছে, নাকি পরোক্ষভাবে আমাদের খাবার-পানিরও ভাগ বসাচ্ছে?
🌍 এআই, পানি ও খাদ্যের অদৃশ্য সংযোগ
অনেকেই জানেন না, এআই চালাতে যে বড় বড় ডেটা সেন্টার দরকার হয়, সেগুলোর জন্য প্রচুর পানি ও বিদ্যুৎ প্রয়োজন। একটি ডেটা সেন্টার সারাদিন রাত হাজার হাজার সার্ভার চালিয়ে রাখে, আর এই সার্ভার ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহার করা হয় লাখ লাখ লিটার পানি।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, Microsoft ও OpenAI-এর মতো প্রতিষ্ঠান শুধু ChatGPT-এর মতো এআই সার্ভার চালু রাখতে বছরে কোটি কোটি লিটার পানি ব্যবহার করছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২২ সালে শুধু মাইক্রোসফট তাদের ডেটা সেন্টার কুলিংয়ের জন্য প্রায় ৬৮ কোটি লিটার পানি খরচ করেছে।
এই পানি কোথা থেকে আসে?
➡️ নদী, পুকুর, হ্রদ কিংবা ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে।
আর এসব উৎসই তো সাধারণ মানুষ বা কৃষির পানির প্রধান ভরসা।
🍚 খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক কোথায়?
পানি সরাসরি শুধু আমাদের খাওয়ার জন্য নয়, কৃষিকাজের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান।
যদি পানি কমে যায়, কৃষি উৎপাদন কমে যাবে। পানি সংকট মানেই কৃষিজমিতে সেচ সংকট, খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত, ফলে খাবারের দাম বেড়ে যাবে।
অর্থাৎ, এআই-এর ডেটা সেন্টার যত বাড়ছে, ততই পরোক্ষভাবে আমাদের খাবার ও পানির ওপর চাপ বাড়ছে।
⚠️ ভবিষ্যতের ঝুঁকি
বিশ্বব্যাপী যেভাবে এআই-এর চাহিদা বাড়ছে, তাতে পানি ও বিদ্যুৎ খরচ আরও বাড়বে। বিশেষ করে যেসব দেশে আগে থেকেই পানি সংকট রয়েছে (বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশও এর বাইরে নয়), সেখানে এই চাপ ভয়ংকর পর্যায়ে যেতে পারে।
এআই হয়তো মানুষকে সুবিধা দিচ্ছে, কিন্তু সেই সুবিধার জন্য প্রকৃতি বড় মূল্য দিচ্ছে।
✅ সমাধানের খোঁজে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো
বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি এখন এআই প্রযুক্তির জন্য গ্রিন এনার্জি ও পানি পুনঃব্যবহার নিয়ে ভাবছে।
কিছু ডেটা সেন্টার ইতিমধ্যেই পুনর্ব্যবহৃত পানি ব্যবহার করছে অথবা বাতাসের তাপমাত্রা দিয়ে কুলিং করছে।
তবুও সমস্যা পুরোপুরি মিটেনি।
🔍 শেষ কথা
এআই প্রযুক্তি আমাদের কাজ সহজ করছে ঠিকই, তবে এর জন্য আমাদের পরিবেশ, পানি ও খাদ্যের ওপরও বড় মূল্য দিতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে টেকনোলজির সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা না করলে, শুধু উন্নত প্রযুক্তি নয়, খাবার-পানির জন্যও আমাদের লড়াই করতে হতে পারে।